
গাজা থেকে পশ্চিম তীর, রক্ত, আগুন আর ধ্বংসস্তূপে আজ ফিলিস্তিন যেন নিঃস্ব এক জাতির প্রতীক। প্রতিবার যুদ্ধবিরতি এলে বিশ্ব এই ভেবে একটুখানি স্বস্তি নেয় যে এবার বোধহয় শান্তি এলো। কিন্তু শান্তি? শান্তি যেন ফিলিস্তিনের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে।
এই চরম বিপর্যয়ের মধ্যেও একটি নাম এখনো আশার আলো হয়ে জ্বলছে, সেই নাম মারওয়ান বারঘুতি।
১৯৫৯ সালে পশ্চিম তীরের ছোট্ট গ্রাম কোবারে জন্ম নেওয়া বারঘুতি, মাত্র পনেরো বছর বয়সে যোগ দেন ফাতাহ আন্দোলনে। দখলদার ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ হয়ে ওঠে সাহসের প্রতীক। বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি জনপ্রিয় হন যুক্তিনির্ভর রাজনীতি আর বাস্তববাদী নেতৃত্বের জন্য।
প্রথম ইন্তিফাদার সময় তাঁকে নির্বাসিত করে ইসরায়েল, কিন্তু তাতে থেমে থাকেননি তিনি। জর্ডান ও তিউনিসিয়ায় নির্বাসিত জীবনে তিনি পিএলওর সঙ্গে যুক্ত হয়ে শেখেন কূটনীতির পাঠ।
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর তিনি পশ্চিম তীরে ফিরে আসেন এবং নির্বাচিত হন ফিলিস্তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে। কিন্তু খুব শিগগিরই বুঝে যান, এই শান্তি প্রক্রিয়া আসলে দখলেরই নতুন রূপ। তখনই তিনি বলেছিলেন, “দখলদারির মধ্যে শান্তি বেড়ে উঠতে পারে না।”
২০০২ সালে রামাল্লাহ থেকে তাঁকে অপহরণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দেন,“আমি সন্ত্রাসী নই, আমি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা।” তাঁকে দেওয়া হয় পাঁচবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু কারাগার তাঁকে ভাঙতে পারেনি। বরং তাঁকে করেছে আরও শক্তিশালী, আরও প্রতীকী।
তিনি এখন ফিলিস্তিনের ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’। কারাগার থেকেই লিখেছেন ঐক্যের বার্তা, ডেকেছেন গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের আহ্বান।
জরিপ আজও বলছে, যদি নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হয়, বারঘুতি হবেন ফিলিস্তিনের জনগণের একমাত্র পছন্দ। ইসরায়েল তাঁকে ভয় পায়, কারণ তাঁর মুক্তি মানে ফিলিস্তিনি ঐক্যের পুনর্জন্ম, ন্যায়ের দাবি আবারো জেগে ওঠা।
মারওয়ান বারঘুতি আজ শুধু এক বন্দী নন, তিনি ফিলিস্তিনের নৈতিক চেতনার প্রতীক, যিনি মনে করিয়ে দেন, ন্যায়বিচারের ভিত্তিতেই একদিন শান্তি ফিরে আসবে।