
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা
ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে বাংলা বিভাগের আয়োজনে আয়োজিত হলো দিনব্যাপী সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ভ্রমণ এবং ‘চুড়ুইভাতি’। ১৫ অক্টোবর (বুধবার) সকাল ১১টায় বাংলা বিভাগের প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ চারটি বাসযোগে রওনা হন ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুরে অবস্থিত পল্লী কবি জসীমউদ্দিন স্মৃতি জাদুঘরের উদ্দেশ্যে।
গন্তব্যে পৌঁছে বাংলা বিভাগের সম্মানিত শিক্ষকগণের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা উৎসাহ-উদ্দীপনায় গান-বাজনা, খেলাধুলা, দলবদ্ধ আড্ডা ও ছবি তোলায় অংশ নেন। এই আয়োজনে শিক্ষার্থীদের মাঝে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবোধের চর্চা নতুন মাত্রা পায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক মোছাঃ রোকেয়া বিলকিছ, সহকারী অধ্যাপক মোঃ শাহিনুর ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুছ আলী, সহকারী অধ্যাপক শিখা রানী, প্রভাষক হালিমা খাতুন, প্রভাষক লীনা পারভীন এবং প্রভাষক হাফিজুর রহমান।
দুপুরের খাবারের পর শিক্ষার্থীরা পরিদর্শন করেন পল্লীকবির স্মৃতি নিয়ে গড়া জাদুঘর। সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে কবির হাতে লেখা দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি, ব্যবহৃত পোশাক, আসবাবপত্র, পারিবারিক চিত্র ও ব্যক্তিগত স্মৃতিচিহ্ন, যা দর্শনার্থীদের নিয়ে যায় এক অনন্য সাহিত্যিক সময়ভ্রমণে। জাদুঘরে আরও রয়েছে কবির বাড়ির আদলে নির্মিত মডেল, বিভিন্ন প্রকাশিত গ্রন্থ ও সম্মাননাপত্র—যা শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করে।
বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, “পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের জীবন, দর্শন ও সাহিত্যকর্ম আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য অধ্যায়। তার রচনাবলি শুধু গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি নয়, বরং এক গভীর মানবিক বোধ ও আত্মিক চেতনার প্রতিফলন। আমাদের শিক্ষার্থীরা তাঁর সাহিত্য পাঠের মাধ্যমে কেবল একজন ভালো পাঠক বা সাহিত্যিক হয়ে উঠবে না, বরং একজন দায়িত্বশীল, মানবিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে-এই চেতনা জাগানোই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুছ আলী বলেন, “জাতীয় সাহিত্য কেবল ইতিহাস নয়, এটি একটি জাতির আত্মা ও চেতনার ধারক। আজকের প্রজন্ম যদি জসীমউদ্দিনের মতো কবিদের জীবন ও সাহিত্য বুঝতে শেখে, তবে তাদের ভেতর গড়ে উঠবে শেকড়সন্ধানী মনন ও মাটির টানে গড়া মানবিক বোধ। এই ধরনের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ভ্রমণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেবল বইয়ের বাইরে শেখার আগ্রহই বাড়ায় না, বরং তাদের সাহিত্যবোধকে জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে তোলে-এটাই আমাদের বড় সাফল্য।”
বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর মতে, “কবি জসীমউদ্দিনের স্মৃতিচিহ্ন ঘিরে ইতিহাস ও সংস্কৃতি বুঝার এ অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। বইয়ে পড়া বিষয়গুলোকে নিজ চোখে দেখার সুযোগ শিক্ষাজীবনে বিরল।”
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে চুড়ুইভাতি আয়োজনের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, “পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের সাহিত্য আমাদের বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তার কর্ম ও কীর্তি থেকে আমরা শিখি ভালোবাসা, মানবতা ও প্রগাঢ় চিন্তা।”
বিকাল ৫ টার দিকে শিক্ষার্থীরা আনন্দময় অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসেন রাজেন্দ্র কলেজ ক্যাম্পাসে। দিনব্যাপী এই সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সফর শিক্ষার্থীদের মাঝে ঐতিহ্যচর্চা ও সাহিত্যিক অনুপ্রেরণার যে সঞ্চার করেছে, তা নিঃসন্দেহে তাদের জ্ঞান, বোধ ও মূল্যবোধ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তারা।