
বাংলাদেশে পানিবাহিত রোগের তালিকায় টাইফয়েড এখনো অন্যতম প্রধান আতঙ্ক। সালমনেলা টাইফি ও সালমনেলা প্যারাটাইফি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট এই রোগ দূষিত পানি ও অপরিষ্কার খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টাইফয়েড শুধু একটি জ্বর নয় এটি এক ধরনের সিস্টেমিক ইনফেকশন, যা শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলে। চিকিৎসা দেরিতে শুরু হলে জটিলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, যেখানে জ্বর দুই সপ্তাহেরও বেশি স্থায়ী হয় এবং রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগে এক মাস পর্যন্ত।
কেন দীর্ঘস্থায়ী হয় টাইফয়েড? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
বেশ কিছু কারনেই দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে টাইফয়েড এর মধ্যে কিছু বিশেষ কারন হলোঃ
চিকিৎসা দেরিতে শুরু করা
প্রথম সপ্তাহে চিকিৎসা শুরু করলে সুস্থতা দ্রুত আসে। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে চিকিৎসা শুরু হলে সংক্রমণ রক্তে মিশে যায়, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, বিশেষত শিশু, বয়স্ক ও অপুষ্টিতে ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া সহজেই শরীরে স্থায়ী আস্তানা গড়ে তোলে। ফলস্বরূপ জ্বর দীর্ঘ হয় এবং সংক্রমণ অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের প্রকোপ
টাইফয়েড জীবাণু এখন অনেক ওষুধের প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, আগে যেসব ওষুধে তিন দিনে কাজ হতো, এখন অনেক ক্ষেত্রে সাত দিনেও জ্বর কমে না।
ভুল বা অসম্পূর্ণ চিকিৎসা
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পুরো কোর্স শেষ না করলে ব্যাকটেরিয়া শরীরে থেকে যায়। পরে এই জীবাণু আরও শক্তিশালী হয়ে পুনরায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ফলে জ্বর বারবার ফিরে আসে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
টাইফয়েড থেকে দ্রুত সুস্থতায় কি করবেন?
চিকিৎসা শুরুর আগে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হোন এটি টাইফয়েড কি না।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনো অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন না।
পরিমিত বিশ্রাম নিন, তরল খাবার গ্রহণ বাড়ান।
বিশুদ্ধ পানি পান ও হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখুন।
সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ না করে ওষুধ বন্ধ করবেন না।
সংক্রমণ ঠেকাতে পরিষ্কার পানি ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।
টাইফয়েড যতটা সাধারণ মনে হয় আসলে এটি ততটাই বিপজ্জনক হতে পারে যদি চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক সঠিক সময়ে এবং পূর্ণ ডোজে না খাওয়াই টাইফয়েড দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। বাংলাদেশের মতো দেশে ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত বিক্রি ও নিজে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।
তাই সময়মতো চিকিৎসা, সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং সচেতনতা, এই তিনই পারে টাইফয়েড জ্বরকে দীর্ঘস্থায়ী হওয়া থেকে রক্ষা করতে।