
গোপালগঞ্জ জেলা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এখানকার গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। জেলা ভরপুর সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান যেমন মেডিকেল হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতালে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, আঞ্চলিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ, মৎস্য ও লাইভস্টক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অব্যাহত প্রবাহ রয়েছে।
তবে প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা- কর্মচারীদের ঠিকানা জেলার বাইরে; তারা চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ থেকেও গোপালগঞ্জে আসেন। এ কারণে যাতায়াত বিভীষিকায় রূপ নেয়। গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী একমাত্র রুট এখন সড়ক যা ৪–৫ ঘণ্টার যাত্রা সময় নেয়, এবং বিপজ্জনক সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
গত ৩ বছরে গোপালগঞ্জে সাধারণ সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩২টি ঘটনা ঘটে। এতে ২৬৬ জন প্রাণ হারান, আর ৪৯২ জন আহত হন। পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট, পিরোজপুর ও নড়াইল জেলার মানুষেরও দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ সহ্য করছেন।
গোপালগঞ্জ উপজেলা “গোবরা রেল স্টেশন” জেলা শহর থেকে নিকটতম রেলস্টেশন। এখানে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের জন্য সুযোগ রয়েছে, কিন্তু ঢাকাগামী ট্রেন সেবা নেই। বর্তমানে ঢাকা–খুলনা ও ঢাকা–বেনাপোল ট্রেনগুলো কাশিয়ানী জংশন হয়ে চলে, যা গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলা-শহরের যাত্রীদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে। রেল স্টেশন থেকে কাশিয়ানী প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এই অভাব পূরণে, গত ৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং রাজশাহী রেলওয়ে বিভাগকে একটি চিঠি প্রেরণ করেছেন। এতে দাবি উঠেছে গোবরা থেকে ঢাকার সরাসরি দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করা হোক।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব নতুন ট্রেন চালু হলে শুধু গোপালগঞ্জ শহর নয়, মুকসুদপুর, কাশিয়ানী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, নড়াইল এবং ফরিদপুর জেলার সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা অঞ্চলের যাত্রীরা উপকৃত হবেন। এটি শুধু যাত্রীসুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।
স্থানীয় জনগণ দাবি করছেন গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী ট্রেন চালু করা হলে সড়কযাতায়াতের বোঝা কমবে, দুর্ঘটনা কমবে এবং মানুষের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।