
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অধীনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই ছাপানোর ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করে সরকারি অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। দুদকের তথ্যমতে, প্রেস মালিকদের একটি অসাধু চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে এই দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে। এর আগে বই ছাপার অনিয়ম নিয়ে দুদকের তদন্ত চলমান থাকলেও সাম্প্রতিক অভিযানে আবারও একই ধরনের দুর্নীতির সত্যতা মিলেছে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এনসিটিবির কার্যালয়ে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে তারা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শন করেছে এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে প্রাসঙ্গিক রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে।
এ বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক মো. আক্তারুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণে নানা অনিয়ম হয়েছে। বিশেষ করে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার, মুদ্রণ মানের ঘাটতি, বাঁধাইয়ে ত্রুটি এবং কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অসাধু চক্রের যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংগৃহীত নথিপত্র পর্যালোচনা করে শিগগিরই কমিশনে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বেশিরভাগ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান দরপত্র নিয়ম না মেনে নিম্নমানের বই ছেপে সরবরাহ করেছে। এনসিটিবি এ কারণে প্রাথমিক স্তরে ৪৮টি এবং মাধ্যমিক স্তরে ২৯টি প্রেসকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে। গত বছর মোট ১১৬টি প্রেস বই ছাপার কাজ পেয়েছিল। মাধ্যমিক স্তরে ২৯টি প্রেস নিম্নমানের বই সরবরাহ করেছে বলে ইন্সপেকশন এজেন্সির প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, এসব প্রেস মিলে প্রায় ১৫ লাখ ৬ হাজার ৯৪টি নিম্নমানের বই সরবরাহ করেছে।
উল্লেখযোগ্য অভিযুক্ত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সৃষ্টি প্রিন্টার্স, কচুয়া প্রেস, অনন্যা প্রিন্টার্স, অটো প্রিন্টিং প্রেস, অগ্রণী প্রিন্টার্স, সরকার প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিকেশন এবং কর্ণফুলী প্রিন্টার্স।
এর আগে, ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালের বই ছাপার অনিয়ম সম্পর্কেও দুদক একটি অভিযান পরিচালনা করেছিল। তখন অভিযোগ উঠেছিল, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বই মুদ্রণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা দক্ষিণ কোরিয়ার টারা টিপিএসের স্থানীয় প্রতিনিধি মেগাটেক জিএনবিডির দরপত্র বাতিল করে, উচ্চমূল্যের দরদাতা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। এতে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
শিক্ষা খাতে এমন দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির নয়, বরং শিক্ষার মান ও ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।