
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা
দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে শান্তি সংলাপ শুরু হচ্ছে। সংলাপ চলাকালীন সময় পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানায়, পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে দোহায় পৌঁছেছে। তবে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ দাবি করেছে, প্রতিনিধি দল এখনও রওনা দেয়নি এবং তারা আজ দোহার উদ্দেশে যাত্রা করবে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনী।
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইসলামাবাদ ও কাবুলের কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমেই খারাপ হতে শুরু করে। এর মূল কারণ তেহরিকই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামক একটি জঙ্গিগোষ্ঠী, যারা পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। পাকিস্তান বহু আগেই টিটিপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, কিন্তু আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের আশ্রয়ে গোষ্ঠীটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে, যা আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চল, সেখানে নিয়মিত টিটিপির সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী। ইসলামাবাদ একাধিকবার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছে যে, আফগান সরকার টিটিপিকে আশ্রয় ও সহায়তা দিচ্ছে। তবে কাবুল এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
সাম্প্রতিক সংঘাতের সূচনা ঘটে ৯ অক্টোবর রাতে, যখন পাকিস্তান কাবুলে বিমান হামলা চালায়। এতে টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ, দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ক্বারি সাইফুল্লাহ মেহসুদসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা নিহত হন। এর জবাবে ১১ অক্টোবর আফগান সেনাবাহিনী পাকিস্তানি সীমান্ত চৌকিগুলোর ওপর হামলা চালায়, এবং এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়, যা চলে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতে আফগান সেনাবাহিনীর প্রায় ২০০ এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৩ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৫ অক্টোবর দুই দেশ ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে গতকাল শুক্রবার ওই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হতেই পাকিস্তান ফের আফগানিস্তানের কান্দাহার ও পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালায়। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত ও দেড় শতাধিক আহত হয়।
এই রক্তক্ষয়ী ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরই কাবুল ও ইসলামাবাদ আবারও যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। আজকের দোহা শান্তি সংলাপে উভয় দেশ দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ খুঁজবে বলে আশা করা হচ্ছে।