
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে। ইতোমধ্যে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা ফিরে যেতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
শুক্রবার থেকে ইসরায়েল-গাজা সীমান্তের ‘ইয়েলো লাইন’ ক্রসিং দিয়ে সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়। শনিবার পর্যন্ত গাজার সিটির শেজাইয়া, আল তুফাহ, জেইতুন, এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশ থেকে সেনারা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ধাপে ধাপে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকেও সেনা প্রত্যাহার করা হবে। সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই নিজ ভূমিতে ফিরতে শুরু করেছেন গাজার বাসিন্দারা। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকায় ফিরে গেছেন।
যানবাহনের সংকট এবং জ্বালানির ঘাটতির কারণে অধিকাংশ মানুষ পায়ে হেঁটেই ফিরছেন। দক্ষিণ গাজার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে পায়ে হেঁটে ফিরছেন হাজার হাজার মানুষ। অনেকে সমুদ্রতীরবর্তী ‘আল রশিদ স্ট্রিট’ এবং ‘সালাহ আল দীন রোড’ ব্যবহার করে গাজার মধ্যাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে ফিরছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর গত দুই বছরের টানা অভিযানে গাজার ৯০ শতাংশ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বাকি ১০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত। যারা নিরাপত্তার খোঁজে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন, তাদের অধিকাংশই এখন ফিরেছেন ধ্বংসস্তূপে। সেখানে তাঁবু খাটিয়ে বসবাস শুরু করেছেন তারা।
গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তর জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো, খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ, এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মৃতদেহ উদ্ধার করতে ৫ হাজার উদ্ধার ও সহায়তা মিশন চালু করা হয়েছে।
এর আগে ২০২৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধবিরতির একটি নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে চালায় প্রাণঘাতী হামলা। এতে নিহত হন প্রায় ১২০০ মানুষ এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। ইসরায়েলের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় ও রক্তাক্ত হামলা।
হামলার পরদিন ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। দীর্ঘ দুই বছরের এই অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি