চাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা, আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ দুই পক্ষের
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির।


গতকাল  বেলা ২ টায় ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় ছাত্রদল। অভিযোগপত্রে বলা হয়, "শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনে (নতুন কলা ভবন) ৩য় তলায় ইতিহাস বিভাগের ৩৩২৩ নম্বর শ্রেনিকক্ষে ইসলামী ছাএশিবির সমর্থিত ’সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সহ সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী মো: ইব্রাহীম হোসেন ২০ মিনিট স্থায়ী ছিলো এবং ক্লাসে উপস্থিত থাকা অবস্থায় সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে প্রচার চালিয়েছে, যা আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়।"


এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “ছাত্রশিবির প্যানেলের প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, এ তথ্য আমরা লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। আমরা নির্বাচন কমিশনের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছি।”


এবিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, "প্রথমত আমি সেখানে নির্বাচনের কোনো প্রচারণায় যায়নি। ডিপার্টমেন্টে একটা কাজে যাচ্ছিলাম। ক্লাস রুমে থাকা শিক্ষার্থীরা অনেকটা জোর করেই আমাকে রুমের ভিতরে নিয়ে যায়। আমি নিজেও যেহেতু ওই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী, তাই তারা আমার থেকে অ্যালামনাইদের নিয়ে কিছু জানতে চায়। বাহিরে অনেক বেশি নয়েজ থাকায় ক্লাস রুমের সাউন্ড সিস্টেমে আমি ১ মিনিটেরও কম সময় কথা বলেছি, এরপর বের হয়ে গেছি। আমার সাথে কোনো লিফলেট বা কেউ ছিলোনা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।"


অপরদিকে, বিকেল ৫ টায় ছাত্রদল কর্মী নাঈম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ক্লাসে নির্বাচনী প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন 'সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী মেহেদী হাসান সোহান।


এই অভিযোগ পত্রে বলা হয়, "বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের এল.এল.এম ক্লাসরুমে অনুষ্ঠিত ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস চলাকালীন সময়ে, আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম উদ্দিন (ছাত্রদলের কর্মী) ক্লাসে প্রবেশ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। তিনি ক্লাস চলাকালীন সময়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারমূলক বক্তব্য প্রদান করেন লিফলেট বিতরণ করেন, এবং অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক ও উত্তেজনাকর মন্তব্য করেন, যা চলমান পাঠদান কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে।"


এছাড়াও অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, " উক্ত কর্মকাণ্ড চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আচরণবিধি, ২০২৫ এর ধারা ৪(৩)এর সরাসরি লঙ্ঘন।"


এই অভিযোগপত্রের সাথে দেয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় অভিযুক্ত ব্যক্তি নাঈম উদ্দিন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের লিফলেট বিতরণ করছেন যা নির্বাচনের আচরণবিধির পরিপন্থী। এছাড়াও এই ভিডিওতে তাকে বক্তব্য দিতে শোনা যায়, "তিনি (সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়) ফিলোসফিতে পরিক্ষা দিতে আসেন। পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় ছাত্রলীগের ছেলেরা তাকে মেরে অর্ধমৃত অবস্থায় কলা অনুষদের ওখানে ফেলে যায়।"


এ ঘটনার তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায় এই প্রার্থী।


অভিযোগপত্রের বিষয়ে চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, "আমরা ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। আমাদের কাছে ভিডিওসহ প্রমাণ আছে। শুধু প্রচারণা নয় সেখানে সে বিভিন্ন দল ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্যও দিয়েছে। আমরা এজন্য অভিযোগ জমা দিয়েছি। আশাকরি নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।"


এবিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, "আমি বিষয়টি জেনেছি। বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে চাকসু নিয়ে আলোচনা করছিল। কিন্তু কেউ যদি স্ব-প্রণোদিত হয়ে লিফলেট বিতরণ বা প্রচারণা চালান এতে আমার দায়ভার নাই। তারা কেনো করেছে আমি জানিনা।"


এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ও সদস্য সচিব ড. এ.কে.এম. আরিফুল হক সিদ্দিকী বলেন, " আমাদের কাছে সবাই সমান।  আমরা দুপক্ষের অভিযোগ পয়েছি। নির্বাচন কমিশনার ও আচরণবিধি মনিটরিং কমিটির প্রধান প্রফেসর ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ এ বিষয়টি দেখছেন। আগামীকাল এ ব্যপারে ব্যবস্থা নেবেন।"


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনী আচরণবিধিমালা এর ৪ এর (ঙ) বিধি অনুযায়ী, 'নির্বাচনী প্রচার- প্রচারণা বিষয়ে উল্লেখিত রয়েছে, প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতে যেখানে ক্লাস-পরীক্ষা হয় সেখানে কিংবা আশে পাশে সভা সমাবেশ করা যাবে না। ক্লাস-পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রমে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় এমন কোন কাজ যেমন কোন ধরণের সাউন্ড সিস্টেম বা মাইক ব্যবহার করা যাবে না। সেদিকে সকল প্রার্থী বা তার সমর্থকদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।'