নবী-রাসুলদের জীবন ছিল সাধারণ মানুষের মতোই
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা

মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন সাধারণ মানুষের ভেতর থেকে নির্বাচিত  যারা আমাদের মতোই জীবনযাপন করতেন। তারা খেতেন, ঘুমাতেন, কাজ করতেন, ক্লান্ত হতেন এবং জীবিকার জন্য পরিশ্রম করতেন। এমনকি তারা বিয়ে-শাদিও করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও তাদের জীবনে কোনো অলৌকিকতা বা অস্বাভাবিকতা ছিল না। বরং স্বাভাবিক জীবনের মধ্য দিয়েই তারা মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করতেন।


পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “যেভাবে আমি তোমাদের মধ্য একজন রাসুল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না।” (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫১)


তবে নবী-রাসুলদের এই সাধারণ জীবনধারা অনেক সময় যুগের অবিশ্বাসীদের বিস্মিত করত। তারা মনে করত, আল্লাহর একজন রাসুল হলে তার জীবনধারা সাধারণের চেয়ে আলাদা হবে। তাদের যুক্তি ছিল আল্লাহর দূত কেন বাজারে চলাফেরা করবেন বা খাবার খাবেন? কেন তার সঙ্গে কোনো ফেরেশতা নেই?


এ বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, “তারা বলে- এ কেমন রাসুল যে খাবার খায়, আর হাট-বাজারে চলাফেরা করে? তার কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় না কেন যে তার সঙ্গে থাকত সতর্ককারী হয়ে? অথবা তাকে ধনভান্ডার ঢেলে দেওয়া হয় না কেন অথবা তার জন্য একটি বাগান হয় না কেন যা থেকে সে খেতে পারে?” (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৭-৮)


এমন সন্দেহ-সংশয়ের উত্তরও আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কারভাবে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আর তোমার পূর্বে যত নবী আমি পাঠিয়েছি, তারা সবাই আহার করত এবং হাট-বাজারে চলাফেরা করত। আমি তোমাদের একজনকে অপরজনের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেছি। তোমরা কি ধৈর্যধারণ করবে? আর তোমার রব সর্বদ্রষ্টা।”(সূরা ফুরকান, আয়াত : ২০)


আসলে মানুষের মধ্য থেকেই নবী নির্বাচন করার পেছনে মহান শিক্ষা রয়েছে। যদি ফেরেশতা বা অন্য কোনো সৃষ্টিকে হেদায়েতের দায়িত্ব দেওয়া হতো, তবে মানুষ বলত, “সে তো আমাদের মতো নয়, তাই আমাদের মতো জীবনসংগ্রাম বোঝে না।”


সুতরাং, নবীদের সাধারণ জীবনযাপনই মানবজাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা  যে আল্লাহর পথে চলা মানে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নয়, বরং বাস্তব জীবনের মাঝেই হেদায়েতের আলো ছড়ানো।