
বাংলাদেশের সামুদ্রিক প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন ও গবেষণার এক নতুন যুগের সূচনা করেছে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি (BMU) এবং দেশীয় রোবোটিক্স প্রতিষ্ঠান ডুবোটেক ডিজিটাল লিমিটেড। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) BMU-এর কনফারেন্স রুমে এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই অংশীদারিত্বের কার্যক্রম শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কমান্ডার মোহাম্মদ ইরফান মাহদী, ডুবোটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোঃ নাঈম হোসেন সৈকত এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মোঃ মাহফুজুল হক।
এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকল (ROV), স্বয়ংক্রিয় রোবোটিক সিস্টেম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক সামুদ্রিক প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করবে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমিকে প্রযুক্তিনির্ভর ও টেকসই ভিত্তিতে শক্তিশালী করা। দেশের একমাত্র সরকারি মেরিটাইম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে BMU দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের পাশাপাশি গবেষণা ও নীতিগত সহায়তা প্রদান করে আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতোমধ্যেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সহযোগিতামূলক প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে, যা সামুদ্রিক শিল্পের প্রযুক্তিগত রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই অংশীদারিত্ব শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করবে। শিক্ষার্থীরা ডুবোটেকের চলমান আন্ডারওয়াটার রোবট প্রকল্পে সরাসরি কাজ করার মাধ্যমে উদ্ভাবনী প্রযুক্তিতে অবদান রাখার সুযোগ পাবে।
এ বিষয়ে ডুবোটেকের সিওও মোঃ মাহফুজুল হক বলেন, “এই সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বাস্তব অভিজ্ঞতার এক অনন্য পথ খুঁজে পাবে। ভবিষ্যতের মেরিটাইম প্রযুক্তি শিল্পে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো এক দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলাই আমাদের লক্ষ্য।”
ডুবোটেক ডিজিটাল লিমিটেড গত আট বছর ধরে বাংলাদেশের আন্ডারওয়াটার ও সামুদ্রিক রোবোটিক্স খাতে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করে আসছে। তাদের নির্মিত একাধিক আন্ডারওয়াটার রোবট ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি শিল্প, পরিবেশ ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহারের উপযোগী রোবোটিক সিস্টেম তৈরিতে কাজ করছে। তাদের লক্ষ্য হলো—বাংলাদেশে একটি টেকসই মেরিটাইম প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা, যেখানে স্থানীয় উদ্ভাবন, গবেষণা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করে দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশের নীল অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে। দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে সমুদ্রসম্পদ অনুসন্ধান, তলদেশ পর্যবেক্ষণ ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে। একইসঙ্গে গবেষণার প্রসার ঘটবে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং শিল্পখাতে উদ্ভাবনের নতুন দ্বার উন্মুক্ত হবে। দীর্ঘমেয়াদে এই উদ্যোগ বাংলাদেশের সামুদ্রিক অর্থনীতিকে প্রযুক্তিনির্ভর ও টেকসই করে তোলার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।